***আমরা ব্রাউন রইস খাই না।***
অথচ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রাইস ব্রান অয়েল ! রাইস ব্রান অয়েলে রয়েছে সর্বাধিক পরিমাপ 'অরাইজনাল' (oryzanol) যা দেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টকে সতেজ ও নিরাপদ রেখে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ জন্য জাপানে এ তেলকে বলা হয় 'হার্ট গার্ড অয়েল'।
সাম্প্রতিক সময়ে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে রাইস ব্রান অয়েল। 'রাইস ব্রান' হচ্ছে ধানের ওপরের শক্ত আবরণের নিচে চালের ওপরের পাতলা 'মেমব্রেন' যা আমাদের দেশে চালের কুড়া নামে পরিচিত। অর্থাৎ ধান ভাঙলে ধানের ওপরের শক্ত আবরণ থেকে বের হয় ভুসি এবং মেমব্রেন থেকে বের হয় ব্রান বা কুড়া। ধানের তুষ তুলে ফেললে যে চাল পাওয়া যায় তার ওপর একটি লালচে খোসা থাকে। ওই খোসাই রাইস ব্রান। ধান থেকে চাল তৈরি করলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ ব্রান পাওয়া যায়। রাইস ব্রান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত ও পরিশোধিত ভোজ্য তেলই হচ্ছে ব্রান অয়েল। ব্রান অয়েল সয়াবিন তেলের মতো একটি ভোজ্য তেল যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত, প্রাকৃতিক ভিটামিন, এন্টি অক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক গামা ওরাইজেনল, যা শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে একমাত্র চালের গুঁড়োতেই পাওয়া যায়। এই তেল প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ এবং শতভাগ কোলেস্টেরলমুক্ত। এতে ভিটামিন এ, ডি, ই ও ওমেগা তিন আছে, যা রক্তের খউখ (মন্দ কোলেস্টেরল) মাত্রা কমিয়ে এবং ঐউখ (ভালো কোলেস্টেরল) মাত্রা বাড়িয়ে হৃদেরাগের ঝুঁকি প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। একটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে রাইস ব্রান অয়েল বা চালের কুড়ায় তেল উৎপাদন শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। পাবনার ঈশ্বরদীতে রশিদ অয়েল মিলস লিমিটেড হোয়াইট গোল্ড ব্র্যান্ড নামে রাইস ব্রান অয়েলের উৎপাদন শুরু করে। বর্তমানে সিলেটের ইমেরাল ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শেরপুরের অ্যামারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ঢাকার ধামরাইয়ে কেবিসি এগ্রো প্রোডাক্টস প্রা. লিমিটেডসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে এই তেল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে।
বাংলাদেশে রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদন
বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের বাৎসরিক চাহিদা জনপ্রতি ৯.৭০ কেজি। ভারত ও পাকিস্তানে ১৪ কেজি। এ হিসেবে বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের জনপ্রতি বছর সয়াবিন তেলের চাহিদা ১৫ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো সয়াবিন তেল উৎপাদন হয় না তবে স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন সরিষা, বাদাম, তিল, পামজাতীয় তেল উৎপাদন হচ্ছে। বাকি প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে ক্রয় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে এবং বাংলাদেশে এনে অপরিশোধিত তেল পরিশোধিত করতে হয়। এজন্য আছে ১০টির অধিক অয়েল রিফাইনারি। বাংলাদেশে ১৬টি রাইস ব্রান অয়েল মিলের মধ্যে বর্তমানে চালু ১৩টির মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন (এফএমপিএচিটি বিভাগ, ব্রি, ২০১৫)। বাংলাদেশে ধান উৎপাদন হয় প্রতিবছর ৫ কোটি ১৬ লাখ মেট্রিক টন প্রায়। এ থেকে চাল পাওয়া যায় ৬৭% অর্থাৎ ৩৪৬ লাখ মেট্রিক টন। এ ৩৪৬ লাখ মেট্রিক টন রাইস/চাল থেকে ব্রান পাওয়া যায় প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। এই ৩৬ লাখ মেট্রিক টন রাইস ব্রান থেকে অপরিশোধিত তেল পাওয়া যাবে ৮ লাখ মেট্রিক টন এবং অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করার পর কমে গিয়ে দাঁড়াবে মাত্র ৭.১৬ মেট্রিক টনে। বর্তমানে রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের। বিনিয়োগ হয়েছে আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা। ভোজ্যতেলের মোট চাহিদায় ব্রান অয়েলের অবদান প্রায় ২.৫ শতাংশ। দাম একটু বেশি হলেও রাইস ব্রান অয়েল রান্নায় অন্যান্য তেল থেকে ২০-২৫% কম লাগে। বাংলাদেশে ১ লিটার রাইস ব্রান অয়েলের দাম ১৩০-১৪০ টাকা এবং ভারতে ১ লিটারের দাম ২৪০-২৫০ টাকা।
ব্রান অয়েলের উপকারিতা
রাইস ব্রান অয়েলে রয়েছে সর্বাধিক পরিমাপ 'অরাইজনাল' (ঙৎুুড়হধষ) যা দেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টকে সতেজ ও নিরাপদ রেখে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ জন্য জাপানে এ তেলকে বলা হয় 'হার্ট গার্ড অয়েল'। মোট কথা পুষ্টি প্রযুক্তির বহুমাত্রিক উন্নয়নে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে রাইস ব্রান অয়েল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া রাইস ব্রান অয়েল আছে প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন উচ্চমানের ভিটামিন ই টকোফেরল ও টকোট্রিনল (ঞড়পড়ঢ়যবৎড়ষ ধহফ ঞড়পড়ঃৎরবহড়ষ)। এ ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকল প্রতিরোধ করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে সব প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে বিধায় রাইস ব্রান অয়েল চর্মরোগ প্রতিরোধ করে চর্মের মসৃণতা বৃদ্ধি করে। এতে রয়েছে পাইটোস্টেরল (চযুঃড়ংঃবৎড়ষং) যা কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ মাত্রা বাড়ায়। তা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে রক্তচাপ কমায় এবং ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখে। এজন্য বিশ্ববিখ্যাত অনেক পুষ্টিবিজ্ঞানী এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী রাইস ব্রান অয়েলের গুণে পঞ্চমুখ।
বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা যা বলেন
রাইস ব্রান অয়েল কোলেস্টরেলমুক্ত, তাই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায় এবং ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখে ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এ কথা স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং ভারতসহ বিভিন্নদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের ড. এএল জারহার্দিদ (উৎ. অ.খ. এবৎযধৎফরঃ) বলেছেন, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিশেন দ্বারা স্বীকৃত যে, বাজারে বহু তেলের মধ্যে সুষম এবং বহুমুখী কর্মশক্তিসম্পন্ন তেল হচ্ছে রাইস ব্রান অয়েল। ভারত সরকারের খাদ্য এবং ভোগ্যপণ্য মন্ত্রণালয়ের ভোজ্য তেলবিষয়ক কমিশনার ডা. এম কেকু বলেন, রাইস ব্রান অয়েল জাপান, চীন ও অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোয় ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং জাপানে এ তেল 'হার্ট অয়েল' নামে পরিচিত।
সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশে রাইস ব্রান তেল উৎপাদনের সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে বাংলাদেশ রাইস ব্রান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেশের বিখ্যাত হেলথ কেয়ার রাইস ব্রান অয়েল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেবিসি এগ্রো. প্রডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুধীর চৌধুরী জানান, মূলত রাইস ব্রান অয়েলের উৎপাদন চালের কুড়া দিয়ে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ধান থেকে বার্ষিক কুড়া উৎপাদন হয় প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন। যা পর্যাপ্ত নয়, তারপরও কুড়া রপ্তানি হয় এবং পোল্ট্রি ও ফিস ফিড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ২০% হলার মেশিন থেকে উৎপন্ন কুড়া ও ৫% আতপ চালের কুড়া এবং ২৫% পোল্ট্রি ও ফিস ফিডে ব্যবহৃত কুড়া অর্থাৎ মোট উৎপাদিত কুড়ার অর্ধেক রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদনে ব্যবহৃত করা যাচ্ছে না। এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠে রাইস ব্রান তেলের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে কুড়া রপ্তানি বন্ধ, পোল্ট্রি ফিড ও ফিস ফিডে রাইস ব্রানের পরিবর্তে অন্য উপাদান ব্যবহার নিশ্চিত, এঙ্গেল বার হলার রাইস মিলগুলোকে রাবার রোল হলার মিল (সেমি. অটোরাইস মিল) অথবা পূর্ণাঙ্গ অটো রাইস মিলে রূপান্তরিত করা জরুরি। এঙ্গেল বার রাইস মিলের (ম্যানুয়েল) কুড়াও রাইস ব্রান তেল তৈরির অনুপযোগী। উৎপাদন বৃদ্ধিতে রাইস ব্রান অয়েল মিলগুলোতে গ্যাস সংযোগ জরুরি প্রয়োজন। তাছাড়া রাইস ব্রান অয়েল মিলে রাইস ব্রান অয়েল ছাড়াও বাৎসরিক ১২ লাখ ৬০ হাজর মেট্রিক টন ফিড উৎপাদন হচ্ছে যা দেশের পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্টগুলো বিদেশে রপ্তানি করার নতুন বাজার সৃষ্টি সম্ভব হবে। তবে ব্যাপকভাবে রাইস ব্রান অয়েল মিল নির্মাণের অনুমতি দেয়ার আগে কাঁচামাল অর্থাৎ কুড়া প্রাপ্তির নিশ্চয়তার কথা ভাবতে হবে সরকারকে। চালের কুড়ার অভাবে মিলগুলো যেন বন্ধ না থাকে। জাতীয় স্বার্থে এ শিল্পের প্রসারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে এবং একই সঙ্গে রাইস ব্রান অয়েলের মান ঠিক রাখতে হবে।
অথচ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রাইস ব্রান অয়েল ! রাইস ব্রান অয়েলে রয়েছে সর্বাধিক পরিমাপ 'অরাইজনাল' (oryzanol) যা দেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টকে সতেজ ও নিরাপদ রেখে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ জন্য জাপানে এ তেলকে বলা হয় 'হার্ট গার্ড অয়েল'।
![]() |
Brown Rice |
![]() |
Rice Bran Oil |
সাম্প্রতিক সময়ে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে রাইস ব্রান অয়েল। 'রাইস ব্রান' হচ্ছে ধানের ওপরের শক্ত আবরণের নিচে চালের ওপরের পাতলা 'মেমব্রেন' যা আমাদের দেশে চালের কুড়া নামে পরিচিত। অর্থাৎ ধান ভাঙলে ধানের ওপরের শক্ত আবরণ থেকে বের হয় ভুসি এবং মেমব্রেন থেকে বের হয় ব্রান বা কুড়া। ধানের তুষ তুলে ফেললে যে চাল পাওয়া যায় তার ওপর একটি লালচে খোসা থাকে। ওই খোসাই রাইস ব্রান। ধান থেকে চাল তৈরি করলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ ব্রান পাওয়া যায়। রাইস ব্রান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত ও পরিশোধিত ভোজ্য তেলই হচ্ছে ব্রান অয়েল। ব্রান অয়েল সয়াবিন তেলের মতো একটি ভোজ্য তেল যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত, প্রাকৃতিক ভিটামিন, এন্টি অক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক গামা ওরাইজেনল, যা শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে একমাত্র চালের গুঁড়োতেই পাওয়া যায়। এই তেল প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ এবং শতভাগ কোলেস্টেরলমুক্ত। এতে ভিটামিন এ, ডি, ই ও ওমেগা তিন আছে, যা রক্তের খউখ (মন্দ কোলেস্টেরল) মাত্রা কমিয়ে এবং ঐউখ (ভালো কোলেস্টেরল) মাত্রা বাড়িয়ে হৃদেরাগের ঝুঁকি প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। একটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে রাইস ব্রান অয়েল বা চালের কুড়ায় তেল উৎপাদন শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। পাবনার ঈশ্বরদীতে রশিদ অয়েল মিলস লিমিটেড হোয়াইট গোল্ড ব্র্যান্ড নামে রাইস ব্রান অয়েলের উৎপাদন শুরু করে। বর্তমানে সিলেটের ইমেরাল ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শেরপুরের অ্যামারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ঢাকার ধামরাইয়ে কেবিসি এগ্রো প্রোডাক্টস প্রা. লিমিটেডসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে এই তেল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে।
বাংলাদেশে রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদন
ব্রান অয়েলের উপকারিতা
রাইস ব্রান অয়েলে রয়েছে সর্বাধিক পরিমাপ 'অরাইজনাল' (ঙৎুুড়হধষ) যা দেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টকে সতেজ ও নিরাপদ রেখে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ জন্য জাপানে এ তেলকে বলা হয় 'হার্ট গার্ড অয়েল'। মোট কথা পুষ্টি প্রযুক্তির বহুমাত্রিক উন্নয়নে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে রাইস ব্রান অয়েল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া রাইস ব্রান অয়েল আছে প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন উচ্চমানের ভিটামিন ই টকোফেরল ও টকোট্রিনল (ঞড়পড়ঢ়যবৎড়ষ ধহফ ঞড়পড়ঃৎরবহড়ষ)। এ ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকল প্রতিরোধ করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে সব প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে বিধায় রাইস ব্রান অয়েল চর্মরোগ প্রতিরোধ করে চর্মের মসৃণতা বৃদ্ধি করে। এতে রয়েছে পাইটোস্টেরল (চযুঃড়ংঃবৎড়ষং) যা কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ মাত্রা বাড়ায়। তা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে রক্তচাপ কমায় এবং ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখে। এজন্য বিশ্ববিখ্যাত অনেক পুষ্টিবিজ্ঞানী এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী রাইস ব্রান অয়েলের গুণে পঞ্চমুখ।
বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা যা বলেন
রাইস ব্রান অয়েল কোলেস্টরেলমুক্ত, তাই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায় এবং ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখে ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এ কথা স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং ভারতসহ বিভিন্নদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের ড. এএল জারহার্দিদ (উৎ. অ.খ. এবৎযধৎফরঃ) বলেছেন, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিশেন দ্বারা স্বীকৃত যে, বাজারে বহু তেলের মধ্যে সুষম এবং বহুমুখী কর্মশক্তিসম্পন্ন তেল হচ্ছে রাইস ব্রান অয়েল। ভারত সরকারের খাদ্য এবং ভোগ্যপণ্য মন্ত্রণালয়ের ভোজ্য তেলবিষয়ক কমিশনার ডা. এম কেকু বলেন, রাইস ব্রান অয়েল জাপান, চীন ও অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোয় ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং জাপানে এ তেল 'হার্ট অয়েল' নামে পরিচিত।
সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশে রাইস ব্রান তেল উৎপাদনের সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে বাংলাদেশ রাইস ব্রান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেশের বিখ্যাত হেলথ কেয়ার রাইস ব্রান অয়েল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেবিসি এগ্রো. প্রডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুধীর চৌধুরী জানান, মূলত রাইস ব্রান অয়েলের উৎপাদন চালের কুড়া দিয়ে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ধান থেকে বার্ষিক কুড়া উৎপাদন হয় প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন। যা পর্যাপ্ত নয়, তারপরও কুড়া রপ্তানি হয় এবং পোল্ট্রি ও ফিস ফিড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ২০% হলার মেশিন থেকে উৎপন্ন কুড়া ও ৫% আতপ চালের কুড়া এবং ২৫% পোল্ট্রি ও ফিস ফিডে ব্যবহৃত কুড়া অর্থাৎ মোট উৎপাদিত কুড়ার অর্ধেক রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদনে ব্যবহৃত করা যাচ্ছে না। এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠে রাইস ব্রান তেলের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে কুড়া রপ্তানি বন্ধ, পোল্ট্রি ফিড ও ফিস ফিডে রাইস ব্রানের পরিবর্তে অন্য উপাদান ব্যবহার নিশ্চিত, এঙ্গেল বার হলার রাইস মিলগুলোকে রাবার রোল হলার মিল (সেমি. অটোরাইস মিল) অথবা পূর্ণাঙ্গ অটো রাইস মিলে রূপান্তরিত করা জরুরি। এঙ্গেল বার রাইস মিলের (ম্যানুয়েল) কুড়াও রাইস ব্রান তেল তৈরির অনুপযোগী। উৎপাদন বৃদ্ধিতে রাইস ব্রান অয়েল মিলগুলোতে গ্যাস সংযোগ জরুরি প্রয়োজন। তাছাড়া রাইস ব্রান অয়েল মিলে রাইস ব্রান অয়েল ছাড়াও বাৎসরিক ১২ লাখ ৬০ হাজর মেট্রিক টন ফিড উৎপাদন হচ্ছে যা দেশের পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্টগুলো বিদেশে রপ্তানি করার নতুন বাজার সৃষ্টি সম্ভব হবে। তবে ব্যাপকভাবে রাইস ব্রান অয়েল মিল নির্মাণের অনুমতি দেয়ার আগে কাঁচামাল অর্থাৎ কুড়া প্রাপ্তির নিশ্চয়তার কথা ভাবতে হবে সরকারকে। চালের কুড়ার অভাবে মিলগুলো যেন বন্ধ না থাকে। জাতীয় স্বার্থে এ শিল্পের প্রসারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে এবং একই সঙ্গে রাইস ব্রান অয়েলের মান ঠিক রাখতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন